‘মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে লুকিয়েছেন মোদি’

‘মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে লুকিয়েছেন মোদি’

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী আসন বারানসিতেও করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কিন্তু এ দুঃসময়ে বারানসিবাসীর পাশে দাঁড়াননি মোদি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সেখানকার বাসিন্দারা।

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির প্রতি মোদির ‘বিশেষ অনুরাগ’ রয়েছে। এ শহরের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার কথাও বলেছেন। কিন্তু করোনার এ দুঃসময়ে তাকে কাছে পাচ্ছে না মানুষ।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরের রাজ্য উত্তর প্রদেশের এ আসনের ক্ষুব্ধ মানুষ তাদের এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দেখতে চান। কিন্তু মোদির যেমন দেখা নেই, তেমনি স্থানীয় বিজেপি নেতারাও মুখ লুকিয়েছেন।

মার্চ মাস থেকে বারানসি শহরে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। দিল্লি ও মুম্বাইয়ে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়লে এ শহরেও ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়। অনেকে ২৯ মার্চ হোলি উৎসবে বাড়ি আসে। এরপর ১৮ এপ্রিল ছিল উত্তর প্রদেশের স্থানীয় সরকারের নির্বাচন।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ওই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাত শতাধিক শিক্ষক মারা গেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৯ এপ্রিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট বারানসি শহরে সাত দিনের লকডাউন দেওয়ার নির্দেশ দেন।

বারানসিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭০ হাজার ৬১২ জনের। মারা গেছেন ৬৯০ জন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৬ হাজার ২৮০ জনই আক্রান্ত হয়েছে ১ এপ্রিলের পর থেকে।

মহামারি শুধু বারানসি শহরে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। চিরাইগাঁওয়ের স্থানীয় ব্লকপ্রধান সুধীর সিং পাপ্পু জানিয়েছেন, তার ব্লকে ১১০টি গ্রাম আছে। এখানে প্রতিটি গ্রামে ৫ থেকে ১০ জন মারা গেছে। কোনো কোনো গ্রামে মৃত মানুষের সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

‘১১০ গ্রামের এ ব্লকে কোনো হাসপাতাল নেই। অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই,’ বলেন তিনি।

করেনার ‘ছোবলে’ যখন এ শহরের মানুষ বিপর্যস্ত, সেই সময় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের জন্য দলের প্রচারে মোদি ১৭ বার পশ্চিমবঙ্গ গেছেন। সেই নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। ১৭ এপ্রিল মোদি বারানসির কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন সভা করেন। স্থানীয় এক মানুষ একে প্রহসন হিসেবে মন্তব্য করেন।

বারানসির এক রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, ‘বারানসি শহর এবং এর মানুষকে ভবিতব্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী (যোগী আদিত্য) লুকিয়েছেন। স্থানীয় বিজেপির নেতারাও কেউ নেই। তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’

প্রসঙ্গত ভারতে দৈনিক সংক্রমণ কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৯ জন। এই সময়ে দেশটিতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ২৮৯ জন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৩। মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৬৬ লাখ ১৩ হাজার ২৯২। মোট মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৪০৮। এই মুহূর্তে দেশটিতে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৩।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের আশেপাশে।

আপনি আরও পড়তে পারেন